আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে, আলোচনা-পর্যালোচনায় আমরা প্রায়ই সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অধঃপতনের বিষয়ে কথা বলি। কেউ বলেন, ‘সময় বদলে গেছে, মানুষ আর আগের মতো নেই’; কেউ বলেন, ‘শ্রদ্ধাবোধ, আন্তরিকতা ও নৈতিকতার মৃত্যু ঘটেছে।’ বাস্তবতা সত্যিই উদ্বেগজনক। সমাজের দিকে তাকালে মনে হয়, চারদিকে এক মহামারীর মতো নৈতিক অবক্ষয় ছড়িয়ে পড়েছে।
✅ তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কি সত্যিই এই অবক্ষয় থেকে মুক্তি চাই? নিঃসন্দেহে, কেউই অন্যায় ও অশ্লীলতা ভালোবাসে না। মানুষ পরিবর্তন চায়, এক আদর্শ সমাজের প্রত্যাশা করে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অনেকে বিভিন্নভাবে সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের পরও কেন কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে না? কেন নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ দেখা যাচ্ছে না?
✅ ভুল পদ্ধতির কারণে ব্যর্থতা:
এর মূল কারণ হলো, সমাজ পরিবর্তনের প্রচেষ্টাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ভুল পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ভুল পথ ও অনৈসলামিক পদ্ধতিতে কোনো সমাজেই ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন:
"إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ"
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।”
(সুরা আর-রাদ: ১১)
✅ অর্থাৎ, সমাজের প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তিগত সংশোধন ও আত্মশুদ্ধি অপরিহার্য। কেবল বাহ্যিক পরিবর্তনের চেষ্টায় সমাজের কাঠামোগত সংশোধন সম্ভব নয়, বরং ইসলামের মূল শিক্ষা ও নববী পদ্ধতিকে গ্রহণ করাই হলো প্রকৃত সমাজ সংস্কারের একমাত্র উপায়।
✅ আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার মূল দিকনির্দেশনা:
রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা বলেছেন:
"تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما: كتاب الله وسنة نبيه"
“আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এদেরকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ কখনও পথভ্রষ্ট হবে না—আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
✅ এই হাদিসের আলোকে আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য আমাদের করণীয় নির্দেশনাগুলো হলো:
১. ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন:
শুধুমাত্র আবেগ নয়, বরং ইসলামের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন করতে হবে এবং সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধ নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে।
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনী (সীরাহ) অধ্যয়ন:
একটি উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবন, তাঁর যুদ্ধসমূহ (মাগাজী) , তাঁর দাওয়াতের কৌশল এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার প্রয়োজন। শুধু পড়া নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতায় তা কীভাবে প্রাসঙ্গিক, সেটিও বুঝতে হবে।
৩. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সমাজ পরিবর্তনের পদ্ধতি অনুসরণ:
রাসূল ﷺ মক্কার এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে কীভাবে পরিবর্তন করে এক আদর্শ ইসলামী সমাজে পরিণত করেছিলেন, তা আমাদের জন্য চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। রাসূলুল্লাহ ﷺ কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুতরাং, তাঁর পদ্ধতিই একমাত্র কার্যকর পন্থা।
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ যা বর্জন করেছেন তা পরিত্যাগ করা:
রাসূল ﷺ সমাজ পরিবর্তনে এমন কোনো উপায় অবলম্বন করেননি যা ইসলামের মূলনীতির পরিপন্থী। আজ আমরা যদি সমাজ সংস্কারের নামে ইসলামবিরোধী মতাদর্শ, রাজনৈতিক চক্রান্ত বা কৌশল অবলম্বন করি, তাহলে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না, বরং সমাজ আরও বিভ্রান্তির দিকে ধাবিত হবে।
✅ সর্বোত্তম পথ: রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর অনুসরণঃ
এই ঘুণে ধরা সমাজের পরিবর্তনের একমাত্র প্রকৃত উপায় হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ যে পথ অবলম্বন করে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাজকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করেছিলেন, সেই পথই আমাদের জন্য উত্তম পদ্ধতি। অন্যান্য কৌশল, মতাদর্শ ও প্রচেষ্টাগুলো হয়তো ক্ষণস্থায়ীভাবে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, কিন্তু একমাত্র নববী পদ্ধতিই দীর্ঘস্থায়ী ও আদর্শ সমাজ গঠনের চাবিকাঠি।
0 মন্তব্যসমূহ