জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও গুণাহ মাফের মাধ্যম হচ্ছে, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ:
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
“হে
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের উপর ঈমান গ্রহণ করো এবং আল্লাহর পথে স্বীয় মাল ও জান দ্বারা জিহাদ
করো।
يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ
عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ
لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (11) يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ
طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (12) وَأُخْرَى
تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ
الْمُؤْمِنِينَ -سورة الصف: 10 - 13
এটা তোমাদের জন্যে অনেক উত্তম; যদি তোমরা জানতে।
আল্লাহ তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,
যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত থাকবে এবং (তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী
জান্নাতের উত্তম ঘরসমূহে।
এটা মহাসাফল্য। এবং (দুনিয়াবী) আরও একটি (পুরষ্কার) হচ্ছে, যা তোমরা পছন্দ
কর।
(তা হচ্ছে) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। (হে নবী, আপনি)
মুমিনদেরকে (উক্ত পুরষ্কার সমূহের) সুসংবাদ দেন।” –সূরা সাফ: ১০-১৩
উক্ত আয়াতের ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
“(উক্ত
আয়াতে) আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার
একমাত্র পন্থা হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা এবং আল্লাহর
রাস্তায় জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করা।”[1]
فأخبر أن النجاة من عذابه إنما هي بالإيمان بالله ورسوله وبالجهاد في سبيله بالنفس والمال
আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানী রহ.
বলেন, “উক্ত দীন (তথা দীনে ইসলাম)কে অন্যান্য ধর্মের উপর বিজয়ী করা তো
আল্লাহ তাআলার কাজ। কিন্তু তোমাদের ফরয হচ্ছে, ঈমানের উপর পূর্ণভাবে অটল
থেকে আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করা। এটা এমন ব্যবসা, যেখানে
কোন লোকসান নেই।
দুনিয়াতে মানুষ হাজারো রকমের ব্যবসা বাণিজ্য করে এবং তাতে
সম্পূর্ণ পুঁজি লাগিয়ে দেয়। শুধুমাত্র এ আশায় যে, তা দ্বারা লাভ হবে এবং
সম্পদ হ্রাস পাওয়া ও নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। ফলে সে ও তার পরিবার
অস্বচ্ছলতা ও দারিদ্রতা থেকে নিরাপদ থাকবে।
কিন্তু মুমিন তার জান ও মালের
পুঁজি উক্ত সূউচ্চ ব্যবসাতে খাঁটবে, যদ্দরুন শুধু কয়েকটি দিনের দারিদ্রতা
থেকে নয়; বরং আখেরাতের কঠিনতম শাস্তি ও ভয়ঙ্কর লোকসান থেকে নিরাপদ হয়ে
যাবে। যদি মুসলিমরা বুঝতো, তাহলে উক্ত ব্যবসা দুনিয়ার সকল ব্যবসার চেয়ে
উত্তম। যার লভ্যাংশ হিসেবে পূর্ণ ক্ষমা এবং চিরাস্থায়ী জান্নাত মিলবে। তার
চেয়ে বড় সফলতা আর কী হতে পারে![2]
আবু কাতাদাহ রাদি. থেকে বর্ণিত,
عَنْ
أَبِي قَتَادَةَ، يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَامَ فِيهِمْ فَذَكَرَ لَهُمْ أَنَّ الْجِهَادَ فِي
سَبِيلِ اللهِ، وَالْإِيمَانَ بِاللهِ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ، فَقَامَ
رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ
اللهِ، تُكَفَّرُ عَنِّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ، إِنْ قُتِلْتَ فِي سَبِيلِ اللهِ،
وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ»، ثُمَّ قَالَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ قُلْتَ؟» قَالَ:
أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَتُكَفَّرُ عَنِّي
خَطَايَايَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«نَعَمْ، وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ، إِلَّا
الدَّيْنَ، فَإِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لِي ذَلِكَ»،
“তিনি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের মধ্যে (খুতবা দেওয়ার জন্য)
দাঁড়িয়ে বর্ণনা করলেন যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর উপর ঈমান
সর্বোত্তম আমলএক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি
আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তাহলে কি আমার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি
আল্লাহর রাস্তায় ধৈর্য্যশীল ও সওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে শত্রুর মুখোমুখী
অবস্থায় পৃষ্টপ্রদর্শন না করে নিহত হও। একটু পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কীভাবে বলেছো? সে বললো, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায়
নিহত হই, তাহলে কি আমার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি আল্লাহর রাস্তায়
ধৈর্য্যশীল ও সওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে শত্রুর মুখোমুখী অবস্থায়
পৃষ্টপ্রদর্শন না করে নিহত হও। তবে ঋণ ছাড়া (আল্লাহর রাস্তায় নিহত হলেও ঋণ
মাফ হবে না)। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে একথা বলেছেন।”[3]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
“অধিক গুণাহে জর্জরিত ব্যক্তির জন্য সর্বোত্তম ঔষদ হচ্ছে জিহাদ। কেননা আল্লাহ তাআলা তার সকল গুণাহ মাফ করে দিবেন। যেমন আল্লাহ কুরআনে এরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দিবেন’।”[4]
[1] আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৭
[2] তাফসীরে উসমানী: ২/৬৮৩
[3] সহীহ মুসলিম: ১৮৮৫
[4] মাজমূউল ফাতাওয়া: ২৮/৪২১
ومن
كان كثير الذنوب فأعظم دوائه الجهاد؛ فإن الله عز وجل يغفر ذنوبه، كما
أخبر الله في كتابه بقوله سبحانه وتعالى: "يغفر لكم ذنوبكم".
[1] আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৭
[2] তাফসীরে উসমানী: ২/৬৮৩
[3] সহীহ মুসলিম: ১৮৮৫
[4] মাজমূউল ফাতাওয়া: ২৮/৪২১
0 মন্তব্যসমূহ