আল ওয়ালা ওয়াল বারা বনাম ইন্টারফেইথ - ২ পর্ব
“ ২০০১ এর পর অনেকে আল ওয়ালা ওয়াল বারার ব্যাপারে তাদের আকিদাহ ও দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে ফেলেছে। সাপের মতো খোলস বদলে অন্য মানুষে পরিণত হয়েছে।
তারা দাবী করে যে ইমাম শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ যেমন তাঁর মাযহাবের ক্ষেত্র পরিবর্তন এনেছিলেন, একইভাবে তারাও পরিবর্তন এনেছে।
ইমাম শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ হলো শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম। তাঁর জীবনকালে তাঁর দুইটা মাযহাব ছিল বলা যায়।
জীবনের প্রথমাংশে তিনি ছিলেন ইরাকে। ইরাকে থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন ফতোয়া দিয়েছেন, লিখেছেন, ছাত্রদের শিখিয়েছেন।
জীবনের পরবর্তী অংশে তিনি পাড়ি মিশরে জমান। মিশরে থাকা অবস্থায়ও তিনি বিভিন্ন ফতোয়া দিয়েছেন, লিখেছেন, ছাত্রদের শিখিয়েছেন।
ইরাকে থাকা অবস্থায় ইমাম শাফেয়ীর অবস্থানের সাথে মিশরে থাকাকালীন অবস্থানের পার্থক্য ছিল।
একজন ফকীহ যখন কোন বিষয়ের উপর ফতোয়া দেন;
তখন কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমার জ্ঞানের পাশাপাশি তাঁকে সেই স্থানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রথা পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সময় ইত্যাদির জ্ঞান রাখতে হয়। একজন ফকীহকে অবশ্যই এগুলো জানতে হবে।
কিন্তু লক্ষ্য করুন, এটা হল ফিকহের ক্ষেত্রে।
ফিকহের ক্ষেত্রে এসব নিয়ামকের কথা বিবেচনা করার কথা বলা হচ্ছে। আকিদাহর ক্ষেত্রে না। আকিদাহ বদলায় না। ফিকহের ক্ষেত্রেও পরিবেশ, প্রেক্ষাপট, ঐতিহ্য, প্রথা ইত্যাদির বিবেচনায় কিছু কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসে। সম্পূর্ণ মাযহাব বদলায় না।
ইমাম শাফেয়ীর অবস্থানে এতো ব্যাপক পরিবর্তন আসার কারণ হল নতুন দলিল পাওয়া।
ইরাক থেকে মিশরে যাবার পর তিনি নতুন অনেক শার’ঈ দলিল সংকলন করেছিলেন, যার ভিত্তিতে তাঁর অবস্থানে পরিবর্তন এসেছিল।
ইমাম শাফেয়ীর জীবনী এবং তাঁর মাযহাব বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, তাঁর পরিবর্তন মিশরে যাবার পর শুরু হয়নি। বরং ইরাক ছেড়ে যাবার ঠিক আগে আগে তাঁর অবস্থানে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। কারণ এই সময় তাঁর কাছে নতুন দলীল এসে পৌছাচ্ছিল।
নতুন দলীলের সন্ধান পাবার পর তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।
তিনি শাসক বা কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের অধিবাসী কিংবা নফসকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের অবস্থান বদলাননি। তিনি অবস্থান বদলেছেন শার’ই দলিলের ভিত্তিতে। এবং তাঁর এই পরিবর্তন শুরু হয়েছিল মিসরে আসার আগেই, ইরাকে থাকা অবস্থাতেই। আর ইরাকে থাকা অবস্থায় ইমাম শাফেয়ীর যে মাযহাব ছিল, তা কারো কাছে বর্ণনা করতে তিনি নিজেই নিষিদ্ধ করেছেন।
কাজেই প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি, ঐতিহ্যের কারণে ইমাম শাফেয়ীর অবস্থানে এতো ব্যাপক পরিবর্তন আনেননি। শাসক, জনগণ কিংবা নফসকে সন্তুষ্ট করার জন্যেও তিনি অবস্থান বদলাননি। তিনি তাঁর অবস্থান বদলে শার’ঈ দলিলের ভিত্তিতে।
আমাদের যুগের যেসব লোক ২০০১ এরপর তাদের আকিদাহ ও অবস্থানে পরিবর্তন করেছে, তার কারণ হল হক্ব থেকে বিচ্যুত হওয়া অথবা দ্বীনের বিষয়কে নফস কিংবা জনগণের কাছে পছন্দণীয় করা।
তারা বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঐ মতকেই গ্রহণ করে যেটা ঐ সময়ে জনপ্রিয়।
তারা এটা করে অন্যদের সন্তুষ্ট করার জন্য। জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য।
প্রয়োজনে তারা কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে গিয়েও মানুষকে কিংবা শাসককে সন্তুষ্ট করার জন্য এমন করে।
তারওপর তাদের এই পরিবর্তন শুধু ফিকহে না। বরং মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা নিজেদের আকিদাহও পালটে ফেলেছে। ”
- শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাফিজাহুল্লাহ
0 মন্তব্যসমূহ