এক প্রোফেসর একদিন তার লেকচার ক্লাসে একটি ব্যাগ হাতে প্রবেশ করলেন। ব্যাগ থেকে টেবিলের উপর কয়েকটি জিনিস বের করে রাখলেন-
১। একটি কাচের জার
২। ৬-৭ টি বড় বড় পাথর,
৩। কিছু নুড়ি-পাথর ও
৪। বালু
কাচের জারটিতে প্রথমে বড় পাথরের টুকরোগুলো দিয়ে জারটি ভরে ফেললেন। এরপর ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন, জারটি পূর্ণ হয়েছে কিনা। তারা হ্যা-বোধক উত্তর করলো। এরপর তিনি এর ভেতর ছোট ছোট নুড়িপাথরগুলো ঢেলে দিলেন, দেখা গেল, বড় পাথরের ফাঁকে ফাঁকে নুড়িপাথরগুলোও সুন্দর বসে গেছে। এবারও ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন এবং একই উত্তর পেলেন। এরপর তিনি প্যাকেটের সবটুকু বালু জারে ঢেলে দিলেন, দেখা গেল বড় ও ছোট পাথরের ফাঁকে ফাঁকে বালুগুলোও সুন্দর বসে গেছে।
এবার তিনি আগের মতই জানতে চাইলেন-
আর কি কোন ফাঁকা জায়গা আছে?
১। একটি কাচের জার
২। ৬-৭ টি বড় বড় পাথর,
৩। কিছু নুড়ি-পাথর ও
৪। বালু
কাচের জারটিতে প্রথমে বড় পাথরের টুকরোগুলো দিয়ে জারটি ভরে ফেললেন। এরপর ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন, জারটি পূর্ণ হয়েছে কিনা। তারা হ্যা-বোধক উত্তর করলো। এরপর তিনি এর ভেতর ছোট ছোট নুড়িপাথরগুলো ঢেলে দিলেন, দেখা গেল, বড় পাথরের ফাঁকে ফাঁকে নুড়িপাথরগুলোও সুন্দর বসে গেছে। এবারও ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন এবং একই উত্তর পেলেন। এরপর তিনি প্যাকেটের সবটুকু বালু জারে ঢেলে দিলেন, দেখা গেল বড় ও ছোট পাথরের ফাঁকে ফাঁকে বালুগুলোও সুন্দর বসে গেছে।
এবার তিনি আগের মতই জানতে চাইলেন-
আর কি কোন ফাঁকা জায়গা আছে?
ছাত্ররা উত্তর করলো- না, একদম কানায় কানায় ভরে গেছে।
এরই মধ্যে পিওন এসে বড় এক মগ কফি দিয়ে গেছে, শিক্ষক এতক্ষণে তা লক্ষ্য করলেন। এবার মগটি তুলে নিয়ে তিনি পুরোটা কফি ঐ জারের ভেতর ঢেলে দিলেন, একটুও উপচে পড়লোনা।
এরই মধ্যে পিওন এসে বড় এক মগ কফি দিয়ে গেছে, শিক্ষক এতক্ষণে তা লক্ষ্য করলেন। এবার মগটি তুলে নিয়ে তিনি পুরোটা কফি ঐ জারের ভেতর ঢেলে দিলেন, একটুও উপচে পড়লোনা।
এরপর শিক্ষক জারটি খালি করে আবারও আগের মত উপাদানগুলো আলাদা করে রাখলেন।
এবার তিনি প্রথমেই জারের ভেতর পুরোটা বালু ঢেলে দিলেন। এরপর নুড়ি ও বড়
পাথরগুলো রাখতে চেষ্টা করলে সেগুলোর অধিকাংশই পাত্রের বাইরে পড়ে গেলো।
ছাত্ররা এসব দৃশ্য দেখে অনেকটা অবাক বনে গেল, শিক্ষক এগুলো দিয়ে কিইবা বোঝাতে চাইছেন! এরপর শিক্ষকটি গল্পের জট খুলতে আরম্ভ করলেন: এই দুটো দৃশ্য থেকে তোমরা কী শিখতে পারলে? আচ্ছা, আমিই বলছি। এই জারটিকে তোমরা তোমাদের জীবন অথবা সময় হিসেবে কল্পনা করো।
ছাত্ররা এসব দৃশ্য দেখে অনেকটা অবাক বনে গেল, শিক্ষক এগুলো দিয়ে কিইবা বোঝাতে চাইছেন! এরপর শিক্ষকটি গল্পের জট খুলতে আরম্ভ করলেন: এই দুটো দৃশ্য থেকে তোমরা কী শিখতে পারলে? আচ্ছা, আমিই বলছি। এই জারটিকে তোমরা তোমাদের জীবন অথবা সময় হিসেবে কল্পনা করো।
➤ বড় পাথরগুলো হলো তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য,
মিশন, ভিশন। কিংবা এগুলো তোমার পরিবার, তোমার সন্তানের সাথে সম্পর্ক গড়ে
তোলার কাজ, যাদেরকে ছাড়া তোমার চলবেই না। এগুলোই তোমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি।
➤ নুড়ি পাথরগুলো হল তোমার চাকুরি ও দৈনন্দিন অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজ, যা তোমাকে করতেই হয়।
➤ বালুর কণাগুলো হলো ‘Sandy works’ তথা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেগুলো করা খুব দরকারি না।
➤ আর কফি/ পানি হলো এমন কিছু কাজ, যা গুরুত্বের বিবেচনায় আরো নিচে।
তুমি যদি তোমার প্রতিদিনের প্রোডাক্টিভ সময়টুকু স্যান্ডি ওয়ার্কস এর মত অগুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়ে ভরাট করে ফেলো, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তথা তোমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ কিংবা পরিবারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজগুলোর জন্য কোন ফাকা সময়ই থাকবেনা। যেমনটি দ্বিতীয়বার দেখলে। বিপরীতে তুমি যদি জারটিকে আগে বড় বড় পাথর দিয়ে পূর্ণ করো, অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সেরে ফেলো, তাহলে অন্যান্য সব কাজের জন্য কিছুটা ফাঁকা সময় হাতে থাকবেই। তাই জীবনে সফলতার জন্য চাই ‘গোল’ ফিক্স করা ও প্রায়োরিটি বুঝে কাজ করা।
তুমি যদি তোমার প্রতিদিনের প্রোডাক্টিভ সময়টুকু স্যান্ডি ওয়ার্কস এর মত অগুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়ে ভরাট করে ফেলো, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তথা তোমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ কিংবা পরিবারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজগুলোর জন্য কোন ফাকা সময়ই থাকবেনা। যেমনটি দ্বিতীয়বার দেখলে। বিপরীতে তুমি যদি জারটিকে আগে বড় বড় পাথর দিয়ে পূর্ণ করো, অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সেরে ফেলো, তাহলে অন্যান্য সব কাজের জন্য কিছুটা ফাঁকা সময় হাতে থাকবেই। তাই জীবনে সফলতার জন্য চাই ‘গোল’ ফিক্স করা ও প্রায়োরিটি বুঝে কাজ করা।
প্রোফেসরের গল্পটি এবার আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে দেখতে পারি। এর আগে
প্রায়োরিটি ম্যাট্রিক্সের আলোচনায় আমরা জেনেছি, কীভাবে আমাদের কাজের
গুরুত্ব ও প্রায়োরিটি নির্ণয় করতে হয়। সেই ম্যাট্রিক্সের সাথে তুলনা করলে
বড় বড় পাথরগুলো (Rocks) এখানে সেই কাজগুলো যেগুলো আমাদের জীবনের লং টার্ম
গোল (যেমন- সালাতের ওয়াক্তে সালাত পড়া, ইসলামী জ্ঞানার্জন, সমাজের জন্য বড়
কোন সাদাক্বায়ে জারিয়ার কাজ করে যাওয়া ইত্যাদি) পূরণে সাহায্য করে, আমাদের
সম্পর্কগুলো উন্নয়নে সাহায্য করে।
নুড়ি পাথরগুলো (Pebbles) হলো সেইসব কাজ
যেগুলো আমাদের প্রতিদিন করতেই হয় (যেমন- পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি, খাওয়া-দাওয়া
ও অন্যান্য কাজ)। আর বালু (Sand) ও কফি (Coffee) দিয়ে পর্যায়ক্রমে
ম্যাট্রিক্সের ৩য় ও ৪র্থ চতুর্ভাগের কাজগুলোকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলোর
গুরুত্ব আরো কম (যেমন- ফেসিবুকিং, মেসেঞ্জারিং, গসিপিং ইত্যাদি)। এই শেষ
কাজগুলো দিয়েই যদি দিনের প্রোডাক্টিভ সময়গুলো পার করে ফেলি, তাহলে আর
গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় থাকে কই?
গল্পটি তুলে এনেছেন প্রখ্যাত আমেরিকান লেখক, গবেষক, বক্তা ও বিজনেসম্যান
স্টীফেন রিচার্ডস কোভে তার বেস্টসেলার বই ‘Seven Habits of the Highly
Effective People‘ বইয়ে। এই বইয়ে তিনি জগতের সফল ব্যক্তিদের ৭ টি অনুসরণীয়
অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে ৩য় অভ্যাসটি হচ্ছে- “First Things
First”. অর্থাৎ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি প্রথমেই করতে হবে।
প্রতিদিনকার
প্রোডাক্টিভ সময়ের শুরুতেই মোস্ট প্রায়োরিটাইজড কাজটি হাতে নিতে হবে,
দরকারি কাজগুলো আগেই সেরে ফেললে অন্য কাজের সময় এমনি-ই পাওয়া যাবে। স্টীভেন
কোভে এখানেই উদাহরণ হিসেবে উপরোক্ত গল্পটির অবতারণা করেছেন, যা টাইম
ম্যানেজমেন্টের ‘Pickle-Jar Theory’ নামে পরিচিত।
সত্যি বলতে এই থিওরিটি প্রায়োরিটি বিষয়ে আমার চিন্তা-ভাবনাকে অনেকখানি বদলে
দিয়েছে, বললে অত্যুক্তি হবেনা। গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে পিছিয়ে গেলেই আমার
মানসপটে ঐ Rocks & Jar এর চিত্র ভেসে ওঠে, আমি বুঝতে পারি, আমি
Rock ছেড়ে Sand/Water নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আবার রুটিনটাকে নতুন করে সেট
করার চেষ্টা করি।
ইবনুল ক্বায়্যিম রহিমাহুল্লাহ এর একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি-
“সময় অপচয় করা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক- কেননা মৃত্যু আপনাকে এই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, সেখানে সময়ের অপচয় আপনাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়।”
“সময় অপচয় করা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক- কেননা মৃত্যু আপনাকে এই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, সেখানে সময়ের অপচয় আপনাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়।”
0 মন্তব্যসমূহ