শিরক যুক্ত ঈমান ও যথার্থ ঈমান:
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ।"/
(لااله الاالله محمد الرسول الله)
এ মহতি কলেমা পড়ে আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনি, কিন্তু তার সঠিক অর্থ আমরা অনেকেই জানি না বা বুঝিনা। এখানে এ বিষয়েই আমার আলোচনা।
কালেমার অর্থ:"আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন সত্য মা'বুদ নেই, মুহাম্মাদ (স:)আল্লাহর রাসূল"।
"মা'বুদ" অর্থ যার এবাদত করা হয়। এবাদত করা অর্থ গোলামী করা। আল্লাহর গোলামী করার অর্থ হলো, আল্লাহর দেওয়া আদেশ ও নিষেধকে মেনে মানব জীবনের সকল কাজ করাই হলো আল্লাহর এবাদত করা বা গোলামী করা।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় এবাদতের অর্থ হলো:
العبادة يقضيء الحيوات الدنيا بحيث أوامر الله تعلي ونواهيه-
অর্থ:"আল্লাহর দেওয়া আদেশ ও নিষেধ কে মেনে মানব জীবনের সকল কাজকে সম্পাদন করাই হলো এবাদত করা বা আল্লাহর গোলামী করা।"
এখানে বুঝাগেল যে, কোন কাজের বিষয়ে আদেশ ও নিষেধের হুকুমদাতা ও বিধান দাতা হলেন একমাত্র আল্লাহ। যে হুকুম মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা তাঁর এবাদত বা গোলামী করি। শুধু মাত্র তাঁর আইন ও বিধানের হুকুম আমরা মেনে চলবো। মানুষের বানানো আইন ও বিধানের তাগুতী মতবাদ ও আদর্শকে আমরা মানবো না।
যথার্থভাবে ঈমান আনার বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ হলো, তাগুত কে অর্থাৎ মানব রচিত আল্লাদ্রোহী মতবাদ ও আদর্শকে আগে বর্জন করো, তারপর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
فمن يفكر بالطاغوت ويومن بالله فقد استمسك بالعروة الوسقي لاانفصام لها
(অর্থ: "যে তাগুত কে (অর্থাৎ মানব রচিত আল্লাদ্রোহী মতবাদ কে) পরিত্যাগ করলো এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ়তার সাথে ঈমান আনলো,সে একটি মজবুত রজ্জু কে দুহাতে এমন শক্তভাবে ধারন করলো, যা আর কখনো ছুটে যাবে না।"(সূরা আল্ বাক্বারাহ্, আয়াত নং ২৫৬)
সুতরাং শিরক মুক্ত খাটি ঈমানের জন্য শর্ত হলো, আল্লার দেওয়া আইন বিধানের বিরোধী মানব রচিত আইন ও বিধানের তাগুতী মতবাদ ও মানুষের আদর্শ কে পরিত্যাগ করে রাসূলের (স:) আদর্শকে মেনে আল্লাহর প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান আনা।
আমাদের ব্যক্তি জীবনে,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল কাজ কী নিয়মে,কী আইন ও বিধানকে মেনে করতে হবে, সেটার জন্য আল্লাহ একটি জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন এবং বলেছেন, তাগুতী মতবাদ কে পরিত্যাগ করে,তোমরা আমার দেওয়া "দ্বীন ইসলাম" অর্থাৎ" ইসলামী জীবন ব্যাবস্হা" কে মেনে চলবে। আল্লাহর নির্দেশ হলো:
ولقد بعثنا في كل أمة رسول ان عبد الله واجتنبوا الطاغوت -
(অর্থ: আমি অবশ্যই সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশনা দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত বা গোলামী করবে এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকবে। সূরা:নাহল, আয়াত নং ৩৫)
"তাগুত"- অর্থ হলো সীমা লঙ্ঘন করা। মানুষের সীমা হলো সে আল্লাহর দেওয়া আইন ও বিধান মেনে গোলামীর সীমার মধ্যে থাকবে। "আব্দুল্লাহ" বা আল্লাহর গোলাম হওয়া সত্বেও তাঁর দেওয়া হুকুম ও মতবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে,গোলামীর সীমা লঙ্ঘন করে নিজেরাই নিজেদের আইন, বিধান ও মতবাদ কে বানিয়ে সেটা মেনে চললে এবং সেটাকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করলে,সেটাই হবে তাগুতী বা আল্লাদ্রোহী কাজ এবং সেটাই হবে শিরকে আকবর বা বড় শিরকী কাজ। আর সেই মানব রচিত তাগুতী মতবাদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে আল্লাহ এখানে নির্দেশ দিয়েছেন।
কুরআনের ঘোষনায় আল্লাহ হলেন সমস্ত রাজত্বের মালিক, তিনিই হলেন হুকুম ও বিধান দাতা। সেখানে কোন মানুষের বানানো তাগুতী আইন ও বিধান কে অনুসরণ ও সমর্থন করে মুসলিম হওয়া যায় না। আল্লাহ বলেন:
الا له الخلق والامر-
(আলা-লাহুল খালকু ওয়াল আমরু।)
(অর্থ: তোমরা জেনে রাখো,সৃষ্টি যার হুকুম চলবে শুধু মাত্র তাঁরই !(সূরা আরাফ, আয়াত নং ৫৪)
#আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
ان الحكم ان لله
(ইনিল্ হুকমু ইন্না লিল্লাহ্।)
(অর্থ: আসমান ও জমীনের সর্বত্রই হুকুম চলবে শুধু মাত্র আল্লাহর। সূরা: ইউসুফ, আয়াত নং ৪০)
আল্লাহর দেওয়া হুকুম তথা ইসলামী জীবন বিধান ছাড়া মানব রচিত অন্য যে কোন তাগুতী (আল্লাদ্রোহী) আইন, জীবন বিধান বা মতবাদ বা আদর্শকে আল্লাহ গ্রহন করবেন না।আল্লাহর ঘোষনা হলো:(১)
ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو في الآخرة من الخاسرين
অর্থ: "যে আল্লাহর দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে অন্য দ্বীন বা জীবন বিধানকে পছন্দ বা গ্রহন করবে, সেটাকে কখনই গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।"(সূরা:আলে ঈমরান،আয়াত নং ৮৫)
(২) কুরআনের ভাষায়:
ان الدين عندالله الاسلام
(ইন্নাদ্দীনা ইন্দাল্লাহিল্ ইসলাম) অর্থাৎ- আল্লাহর নিকটে একমাত্র গ্রহনযোগ্য দ্বীন বা জীবন ব্যাবস্হা হলো "ইসলাম"।
আল্লাহর দেওয়া "ইসলামী জীবন ব্যাবস্হা" বা "দ্বীন ইসলাম"কে বাদ দিয়ে, যদি মানব রচিত কোন তাগুতী(আল্লাদ্রোহী) মতবাদ বা কোন মানুষের আদর্শকে মেনে চলি বা সমর্থন করি বা সেটাকে জীবনের কর্মে এবং সমাজে ও রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা, আন্দোলন বা রাজনীতি করি, তবে সেটাই হবে আল্লাহর সাথে করা "শিরকে আকবর" বা সবচেয়ে বড় শিরকী কাজ।
তাগুতী (আল্লাদ্রোহী) মতবাদের মধ্যে যেমন রয়েছে:
১/ কার্ল মার্কস,লেনিন, হেগেলদের Socialism বা সমাজ তান্ত্রিক মতবাদ,
২/ মাওসেতুঙ এর মাওবাদী (Communism) কমিউনিজম মতবাদ,
৩/ জর্জ ওয়াশিংটনের গণতন্ত্রের মতবাদ,তথা "জনগন হলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও সকল ক্ষমতার মালিক -("Govt. of the people by the people for the people") এটা একটি কুফুরী মতবাদ ।
৪/ আমাদের দেশের বাসদ,
৬/ জাসদ,
৭/ জাতীয় পার্টির এরশাদের মতবাদ,
৮/ জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদ,
৯/ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজ তান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত্তিতে শেখ মুজিবের আদর্শের আওয়ামী লীগ।
১০/ খৃষ্টানদের Trinity বা তিন স্রষ্টায় বিশ্বাস করা তথা খৃষ্টবাদ(Christianity),
১১/ ইয়াহুদীবাদ(Zudaism) সহ এমন যতগুলো মানব রচিত ও মানব প্রবর্তিত আদর্শ ও মতবাদ আছে,সেগুলো সবই তাগুতী মতবাদ তথা শিরকী ও কুফুরী মতবাদ। এগুলো এক আল্লাহর দেওয়া কুরআন ও সুন্নাহর আইন ও বিধানকে অনুসরণ বা প্রতিষ্ঠা করার মতবাদ নয় বরং মানুষের নিজেদের পছন্দমতো বানানো মতবাদ। সেজন্যই এগুলোকে আল্লাহ তাগুতী বা আল্লাদ্রোহী মতবাদ বলেছেন। এগুলোকে বিশ্বাস, অনুসরণ এবং ব্যক্তি জীবনে, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা , আন্দোলন বা রাজনীতি করলে সে আর মুসলমান থাকে না বরং সে হয়ে যার মুশরিক ও কাফির। তাই মু'মিন ও মুসলিম হবার পূর্বশর্ত হিসাবে আল্লাহ এ গুলোকে ত্যাগ করতে বলেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ হলো:
...فمن يكفر بالطاغوت ويوم بالله
( অর্থাৎ-আগে তাগুত কে ত্যাগ কর তারপর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো...। সূরা:আল্ বাকারাহ্, আয়াত নং ২৫৬)
#আল্লাহ আরো বলেন:
اتبعوا ما انزل اليكم من ربكم ولا اتبعوا من دونه اولياء-(سورة اعرف-٣)
(অর্থ: তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো। সেটাকে বাদ দিয়ে কোন অবিভাবকদের ( তাগুতী নেতা বা ওলী-দরবেশের) অনুসরণ করো না। সূরা: আ'রাফ, আয়াত নং ০৩)
আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে মু'মিন হবার পর যদি কেউ এসব তাগুতী মতবাদ ও মানবাদর্শের প্রতি আস্হা ও সমর্থন রেখে তা মেনে চলে এবং সেটাকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা, আন্দোলন বা রাজনীতি করে,তাহলে সেটা হবে শিরকী কাজ। যার ফলে তার ঈমান ও আমল নষ্ট হয়ে যাবে।
আল্লাহর ঘোষণা:
ومن لم يحكم بما انزل الله الاءكهم الكافرون ......
(অর্থ: আল্লাহর নাযিলকৃত আইন ও বিধান(কুরআনের আইন) অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারা কাফের। যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না তারা জালেম। যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না তারা ফাসিক।সূরা:তাওবা, আয়াত নং ৪৪,৪৫ ও ৪৭)
আল্লাহ বলেছেন:ইসলামের কিছু অংশ মানবা আর কিছু অংশ মানুষের আদর্শকে মানবা এবং মানুষের বানানো আইন,বিধান ও মতবাদ কে মানবা, তাহলে তুমি পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হতে পারবে না,তুমি হবে মুশরিক্ ও কাফির।
* আল্লাহ বলেন:
ادخلوا في السلم كافة
(অর্থ: তোমরা দ্বীন ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করো।-আল্ কুরআন)
* আল্লাহ আরো বলেন:
افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فماجزاءمن يفعل ذالك منكم الاخزيءفي الحيواة الدنيا ويوم القيام يريدون الي اشدالعذاب وما الله بغافل عما تعملون-(البقرة،اية٨٥)
(অর্থ: তোমরা কি কুরআনের কিছু অংশ মানবা আর কিছু অংশ কে ত্যাগ বা অস্বীকার করবা ? যারা এরূপ করবে তাদের জন্য রয়েছে পার্থিব জীবনে লাঞ্চনা,আর কিয়ামতে তারা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপিত হবে। (সূরা:আল্ বাকারাহ্-আয়াত নং ৮৫)
ইসলাম হলো একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্হা-A complete code of life. নামাজ, রোজা সহ কিছু উপাসনাকে ইসলাম হিসাবে মানলে, আর সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অর্থনীতি , বিচার বিভাগ সহ সর্বত্র ইসলামী আইন ও বিধানকে না মেনে মানুষের বানানো তাগুতী আইন ও বিধান কে মানলে এবং রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ (স:) কে আদর্শ না মেনে অন্য মানুষ কে নিজেদের আদর্শ মানলে সেটা হবে আল্লাহর সাথে শিরকী ও কুফুরী কাজ। এ কারণে তার ঈমান নষ্ট হবে এবং পরকালে আল্লাহ তার আমলনামাকে ও ধ্বংস করে দিবেন।
#আল্লাহ বলেছেন:
وما يومن اكثرهم بالله الا وهم مشركون-
(অর্থ: আল্লাহর প্রতি বিপুল সংখ্যক লোক ঈমান আনলেও শিরক করার কারণে তারা হবে মুশরিক। সূরা, ইউসুফ, আয়াত নং ১০৬)
" আল্লাহ বলেন:
لأن اشركت ليحبطن عملك ولتكونن من الخاسرين
(অর্থ: তুমি যদি শিরক করো তাহলে অবশ্যই তোমার আমলনামা কে ধ্বংস করে দেওয়া হবে এবং পরকালে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূরা: আঝ্ ঝুমার, আয়াত নং ৫৬)
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" এর মধ্যে এ কথারই অঙ্গীকার করা হয়েছে যে,আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মা'বুদ মানি না অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আইন ও বিধানদাতা, সৃষ্টিকর্তা বা রিজিক দাতা বা মৃত্যু দাতা বা হুকুম দাতা বা প্রিয় আদর্শ বা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য হিসাবে মাবুদ বলে মানি না। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" দ্বারা একথাই বুঝানো হয়েছে।
বুঝে "লা ইলাহা আল্লাহ্" কালেমা পড়ে এবং নামাজ,রোজা করে ভেবে নিলাম আমি একজন মু'মেন কিন্তু বাস্তব জীবনে মানুষের নিজেদের বানানো আইন ও বিধানের তাগুতী মতাদর্শকে মেনে চললাম। সেটা হবে শিরকী কাজ।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
فمن يكفر بالطاغوت و يومن بالله فقد استمسك بالعرواة الوثقي لاانفصام لهاوالله سميع عليم-
(অর্থ: যে ব্যক্তি তাগুতকে বর্জন করল এবং তারপর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল,সে এক শক্ত রজ্জুকে দু'হাতে এমন মজবুত ভাবে ধারণ করল, যেটা কখন ও ছুটে যাবার নয়। আল্লাহ সবচেয়ে বেশি শ্রবণ করেন ও সবচেয়ে বেশী জানেন।" সূরা আল্ বাক্বারাহ, আয়াত নং ২৫৬)
এখানে আল্লাহ পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে বললেন যে,যথার্থ ভাবে ঈমান আনতে হলে আগে তাগুত কে(কুরআন ও সুন্নাহর আইনের বিরুদ্ধে মানব রচিত মতবাদ কে) বর্জন করতে হবে এবং তারপরে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে। অন্যথায় সে ঈমান হবে শিরক যুক্ত ঈমান। সেই ঈমান আল্লাহর নিকটে গ্রহন যোগ্য নয়। এমন শিরক যুক্ত ঈমান নিয়ে আমরা নামাজ, রোজা,হজ্জ সহ যত এবাদতের আমলই করি না কেন মৃত্যুর আগে তাওবা করে শিরকী ঈমান থেকে ফিরে না আসলে সে আমলনামাকে আল্লাহ পরকালে ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ (স:)কে উদ্দেশ্য করে বলে দিয়েছেন :
(১) لان اشركة ليحطن عملك ولتكونن من الخاسرين
(অর্থ: যদি তুমি নিশ্চিত ভাবে শিরক কর,তাহলে তোমার সকল আমলনামা পরকালে ধ্বংস করে দেওয়া হবে এবং তুমি পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পরিগণিত হবে। সূরা-আঝ্ ঝুমার, আয়াত নং ৬৫)
(২) আল্লাহ আরও বলেন:
وانه فمن يشرك بالله فقد حرم الله عليه الجنة و موءاهم النار-
(অর্থ: যে আল্লাহর সাথে শিরক করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। আর তার ঠিকানা হবে জাহান্নামের আগুনে।(সূরা,মায়িদা, আয়াত নং ৭২)।
(৩) আল্লাহ আরো বলেন:
ان الله لا يغفر ان يشرك به ويغفر ما دون ذالك لمن يشاء-(سورة النساء-اية ١١٦)
(অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,যে তার সাথে কাউকে শরীক করে।এ ছাড়া অন্য যে কাউকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন। সূরা নেসা, আয়াত নং১১৬)
(৪) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাবি করে, অথচ জীবনের সকল কাজের আইন ও বিধান এবং বিচার ফায়সালা করে মানুষের বানানো কুরআন বিরোধী তাগুতী আইন দিয়ে, সে হলো বড় মুশরিক ও বড় কাফির। তার ঈমান ও আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ বলেন:
ألم تر الي الذين يزعمون انهم امنوا بماانزل إليك وما انزل من قبلك يريدون ان يتحكموا الي الطاغوت وقد امروا ان يكفروابه ويريد الشيطان ان يضلهم ضلالا بعيدا-(سورة النساء-٦٠)
(অর্থ: হে নবী! তুমি কি তাদেরকে দেখোনি,যারা এই মর্মে দাবি করে চলেছে যে,তারা ঈমান এনেছে সেই কিতাবের প্রতি যা তোমার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং সেই সব কিতাবের প্রতি যেগুলো তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল ; কিন্তু তারা নিজেদের বিষয় সমূহ ফায়সালা করার জন্য "তালুতে"র(আল্লাদ্রোহী মতবাদের) দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদের কে "তাগুত"কে অস্বীকার করার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছিল?-শয়তান তাদের কে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে গুমরাহীর পথে নিয়ে যেতে চায়। সূরা:নেসা, আয়াত নং ৬০)
(৫) আল্লাহ বলেন:
ماكان للنبي والذين امنوا ان يستغفروا للمشركين ولو كانوا الي القربي
(অর্থ: কোন নবী এবং যারা মো'মেন তারা কোন মুশরিকদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন না। যদিও তারা আপন আত্মীয় ও হয়ে থাকুক না কেন! সূরা:আত্ তাওবা, আয়াত নং ১১৩)
(৬) মুনাফিকের আলামত:
واذا قيل لهم تعلوا الي ما انزل الله والي الرسول راءيت المنافقين يصدون عندك صدودا-(سورة النساء-٦١)
(অর্থ: আর আপনি যখন তাদের কে (মুনাফিক ও মুশরিকদের কে) বলবেন, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার দিকে (কুরআনের হুকুমের দিকে) এবং তাঁর রাসূলের দিকে ,তখন তুমি তাদের কে দেখতে পাবে,তারা নিজেদের কে তোমার থেকে আড়াল করে দুরে সরে যাচ্ছে। সূরা:নেসা, আয়াত ৬১)
(৭) আল্লাহ মুনাফিক ও মুশরিকদের বিষয়ে আরও বলেন:
ولا تصل علي احد منهم مات أبدا ولا تقدم علي قبره انهم كفروا بالله ورسوله وماتوا وهم فاسقون-(سورة التوبة-٨٥)
(অর্থ: তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপরে কখনও নামাজ (জানাজার নামাজ) পড়বেন না।আর তার কবরে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। বস্তুত তারা ফাসিক নাফরমান হিসাবে (কুরআন ও সুন্নাহর বিধান কে না মানা) মৃত্যু বরণ করেছে। সূরা:আত্ তাওবাহ, আয়াত নং ৮৪)
(৮) মুশরিক,ফাসিক ও মুনাফিকদের বিষয়ে আল্লাহর ঘোষণা:
اسغفر لهم او لا تستغفرلهم٫ان استغفرلهم سبعين مرة فلن يغفر الله لهم٫ذالك لأنهم كفروا بالله ورسوله٫والله لا يهدي الثوم الفاسقين-(سورة توبة-٧٠)
(অর্থ: তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর,যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ও ক্ষমা প্রার্থনা কর, তথাপি কখনই আল্লাহ তাদের কে ক্ষমা করবেন না। তা জন্য যে তারা আল্লাহকে ও তাঁর রাসূলকে (ইসলামী জীবন বিধান কে) অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফরমানদের কে পথ দেখান না। সূরা:তাওবা, আয়াত নং ৮০)
অতএব، আল্লাহর নিকটে গ্রহন যোগ্য ঈমানের জন্য শর্ত হলো: তাগুত মুক্ত এবং শিরক মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠ চিত্তে এক আল্লাহর প্রতি প্রগাঢ় ঈমান আনা এবং ইসলামী জীবন বিধানকে অনুসরণ করে জীবনের সকল কাজ কর্ম সম্পাদন করা।
নিজের ইচ্ছা ও পছন্দকে বর্জন করে শিরক মুক্ত যথার্থ ঈমানের সাথে এক আল্লাহর দেওয়া কুরআন ও সুন্নাহর আইন ও বিধানের অনুসরণ করলেই সে হবে খাঁটি মু'মেন ও খাঁটি মুসলিম।"
শরীফুল ইসলাম।
0 মন্তব্যসমূহ